ভার্মিকম্পোস্ট সার: পরিবেশবান্ধব কৃষির নতুন দিগন্ত

User

শিক্ষার্থী , University of Rajshahi

Student


রেজী:
BCW24120007

প্রকাশিত:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

ভার্মিকম্পোস্ট সার: পরিবেশবান্ধব কৃষির নতুন দিগন্ত

 

ভার্মিকম্পোস্ট বা কেঁচো সার হলো এক ধরনের জৈব সার, যা কেঁচোর মাধ্যমে জৈব বর্জ্য পরিণত হয় পুষ্টিসমৃদ্ধ সারে। এটি মাটির গুণগত মান উন্নত করে, ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। তরুণ উদ্যোক্তারা কেঁচো সার উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত কীভাবে এগোবেন, তা ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো।

ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদনের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ প্রয়োজন। এর মধ্যে প্রধান উপাদান হলো কেঁচো (Eisenia fetida বা African Night Crawler), জৈব বর্জ্য (গোবর, পচা শাকসবজি, খোসা, কৃষিজাত আবর্জনা), নারকেলের ছোবড়া বা খড়, কাঠ বা প্লাস্টিকের বাক্স/বেড, ছায়াযুক্ত ও স্যাঁতসেঁতে জায়গা এবং পর্যাপ্ত পানি।

সার তৈরির জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। এমন জায়গা বেছে নিতে হবে যেখানে সরাসরি সূর্যের আলো কম পড়ে। ছায়াযুক্ত স্থানে খোলা বা শেডযুক্ত ঘর তৈরি করতে হবে। এরপর কেঁচো পালনের জন্য কাঠ, ইট বা প্লাস্টিক দিয়ে ৩-৪ ফুট প্রশস্ত এবং ১.৫-২ ফুট গভীর বেড তৈরি করতে হবে। বেডের নিচে প্লাস্টিকের শিট বা জাল দিতে হবে যাতে কেঁচো বের হয়ে না যায়। এরপর গোবর, শাকসবজির উচ্ছিষ্ট, খোসা ইত্যাদি ১০-১৫ দিন ধরে পচিয়ে নিতে হবে। এই উপাদান বেডে সমানভাবে ছড়িয়ে দিয়ে পানি ছিটিয়ে আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে। এরপর কেঁচো ছেড়ে দিয়ে উপরে খড় বা নারকেলের ছোবড়া দিতে হবে। বেডের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ৪-৫ দিন পরপর সামান্য পানি দিতে হবে। তাপমাত্রা ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার চেষ্টা করতে হবে এবং সরাসরি সূর্যের আলো ও ভারী বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। ৪৫-৬০ দিনের মধ্যে ভার্মিকম্পোস্ট প্রস্তুত হয়ে যাবে।

সার প্রস্তুত হলে বেডের ওপরের অংশ শুকিয়ে গেলে তা সংগ্রহ করতে হবে। ছাঁকনির মাধ্যমে বড় অংশ আলাদা করে শুকিয়ে ব্যাগ বা বস্তায় ভরে শীতল ও শুষ্ক স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে। সার ভালো মানের হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করা জরুরি। ভালো মানের সার কালো বা গাঢ় বাদামি রঙের হবে, কোনো গন্ধ থাকবে না এবং এর পিএইচ মান ৬-৭-এর মধ্যে থাকলে কার্যকর হবে।

বাজারজাতকরণের জন্য উপযুক্ত প্যাকেজিং ও ব্র্যান্ডিং জরুরি। সার পলিথিন ব্যাগ, বস্তা বা কার্টনে প্যাক করতে হবে (১ কেজি, ৫ কেজি, ২৫ কেজি ইত্যাদি)। ব্যাগের গায়ে ব্র্যান্ড নাম, ব্যবহারবিধি, সুবিধা ইত্যাদি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। আকর্ষণীয় লোগো ও ডিজাইন তৈরি করে বাজারে দৃশ্যমানতা বাড়ানো যেতে পারে।

বাজারজাতকরণ কৌশল হিসেবে কৃষকদের কাছে সরাসরি বিক্রির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। স্থানীয় কৃষকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা, কৃষি মেলা বা হাটে অংশগ্রহণ করা কার্যকর হতে পারে। এছাড়া, কৃষি ও বাগান কেন্দ্রিক দোকানে সরবরাহ করা যেতে পারে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিক্রির সুযোগও রয়েছে। ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল এবং ওয়েবসাইট তৈরি করে প্রচার চালানো যেতে পারে। পাশাপাশি অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেওয়া এবং কৃষি সংক্রান্ত ই-কমার্স ওয়েবসাইটে (Daraz, Bikroy, Ajkerdeal) বিক্রির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সাথে চুক্তির মাধ্যমেও বিক্রয় বাড়ানো সম্ভব। কৃষি বিভাগ, এনজিও বা সমবায় সমিতির সাথে কাজ করে সরকারি বা বেসরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সরবরাহ করা যেতে পারে।

সফলভাবে এই ব্যবসা পরিচালনার জন্য কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। প্রথমে ছোট পরিসরে শুরু করে ধীরে ধীরে বড় পরিসরে সম্প্রসারণ করা উচিত। সার উৎপাদনের মান নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি, কারণ নিম্নমানের সার হলে বাজার হারানোর সম্ভাবনা থাকে। গ্রাহকদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে পারলে ব্যবসা দ্রুত সম্প্রসারিত হবে। বাজার চাহিদা বিশ্লেষণ করা দরকার, কোথায় বেশি চাহিদা এবং কোন দামে বিক্রি করলে লাভ বেশি হবে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। বিক্রয়োত্তর সেবা দিয়ে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করা যেতে পারে।

ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য লাভজনক এবং টেকসই ব্যবসার সুযোগ এনে দিতে পারে। এটি কম বিনিয়োগে শুরু করা যায় এবং এর চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। সঠিক পরিকল্পনা ও পরিশ্রম করলে এটি একটি সফল ব্যবসা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।