শহীদ ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা: এক মহান শিক্ষকের আত্মত্যাগ

User

শিক্ষার্থী , Rajshahi University

BA (hons),2nd year


রেজী:
BCW24080005

প্রকাশিত:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

শহীদ ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা: এক মহান শিক্ষকের আত্মত্যাগ

 

 

 

 

 

শহীদ ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা: এক মহান শিক্ষকের আত্মত্যাগ

বাংলাদেশের ইতিহাসে শহীদ ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি শুধুমাত্র একজন শিক্ষাবিদই নন, বরং এক নির্ভীক সংগ্রামী, যিনি ছাত্রদের রক্ষার্থে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁর এই আত্মত্যাগ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এক মহান অনুপ্রেরণা হয়ে আছে।

আবু সাঈদের আত্মত্যাগ এবং জোহার আদর্শ

২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলির সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এবং গুলিতে শহীদ হন। তাঁর এই সাহসী ভূমিকা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দেয়। শহীদ আবু সাঈদের ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা যায়, তিনি যে আত্মত্যাগের প্রেরণা পেয়েছিলেন, তা আসে একজন মহান শিক্ষকের জীবন থেকে—বাংলাদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা।

ড. শামসুজ্জোহার সংক্ষিপ্ত জীবনী

ড. শামসুজ্জোহা ১৯৩৪ সালের ১ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় বাঁকুড়া জেলা স্কুলে, যেখান থেকে ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫০ সালে বাঁকুড়া ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে আই.এসসি পাস করেন। পরে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে চলে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে ভর্তি হন এবং ১৯৫৩ সালে বি.এসসি (সম্মান) ও ১৯৫৪ সালে এম.এসসি ডিগ্রি লাভ করেন।

এরপর তিনি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে ১৯৫৭ সালে পুনরায় বি.এসসি (সম্মান) এবং ১৯৬৪ সালে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও আত্মত্যাগ

ড. শামসুজ্জোহা ১৯৬১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে যোগদান করেন এবং একই বছর রসায়ন বিভাগের লেকচারার হন। ১৯৬৬ সালে তিনি রিডার পদে উন্নীত হন এবং শাহ মখদুম হলের প্রাধ্যক্ষ হন।

১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর সেনাবাহিনী আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করলে তিনি সামনে এসে দাঁড়ান এবং বলেন—

"ছাত্রের আগে যেন আমার গায়ে গুলি লাগে।"

এই সাহসী উচ্চারণের পর পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী।

শ্রদ্ধাঞ্জলি ও স্মরণীয় স্থাপনা

ড. শামসুজ্জোহার স্মরণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে তাঁকে সমাহিত করা হয়, যা এখন "জোহা চত্বর" নামে পরিচিত। তাঁর স্মরণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আবাসিক হলের নামকরণ করা হয়েছে "শহীদ শামসুজ্জোহা হল"। ১৮ ফেব্রুয়ারি দিনটি "ড. জোহা দিবস" হিসেবে পালন করা হয়।

এছাড়া নাটোরে তাঁর নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ প্রতিবছর "জোহা সিম্পোজিয়াম" পালন করে। শিক্ষক সমাজ দীর্ঘদিন ধরে ১৮ ফেব্রুয়ারিকে "জাতীয় শিক্ষক দিবস" হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে।

উপসংহার

শহীদ ড. শামসুজ্জোহা শুধু একজন শিক্ষক ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক আদর্শের প্রতীক। তাঁর আত্মত্যাগ বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাঁর রক্তস্নাত পথ ধরে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়, যার মাধ্যমে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের পতন ঘটে। তাঁর আত্মদানের আদর্শ আজও প্রজন্মের পর প্রজন্মকে দেশপ্রেম ও সাহসের শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে।


(তথ্যসূত্র: বিভিন্ন গবেষণা প্রবন্ধ ও ইতিহাসভিত্তিক তথ্যসূত্র)

লেখক: নাজাত মৃধা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
বিভাগ: দর্শন বিভাগ