সমান সুযোগ, সমান মর্যাদা: প্রতিবন্ধীদের অধিকার

User

শিক্ষার্থী , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

None


রেজী:
BCW24120002

প্রকাশিত:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

 সমান সুযোগ, সমান মর্যাদা: প্রতিবন্ধীদের অধিকার

 

 

প্রতিবন্ধিতা মানুষের শারীরিক বা মানসিক সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা হলেও এটি কখনোই তাদের সম্ভাবনার অন্তরায় হতে পারে না। কিছু মানুষ জন্মগতভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হয়, আবার অনেকে বিভিন্ন রোগ বা মানবসৃষ্ট কারণে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। শারীরিক, মানসিক, দৃষ্টি, বাক, বুদ্ধি, শ্রবণ, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম, শ্রবণ-দৃষ্টি এবং বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা তাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকতে পারে।

প্রতিবন্ধীদের জীবনধারা সমাজের অন্যান্য মানুষের তুলনায় আলাদা হলেও তাদের প্রতিভা ও সক্ষমতা কোনো অংশে কম নয়। অনেক সময় তারা নিজেদের সংকোচিত মনে করে, কারণ সমাজের একটি বড় অংশ এখনো তাদের বোঝা হিসেবে দেখে। তবে বর্তমানে প্রতিবন্ধীরা কায়িক শ্রমের পরিবর্তে মানসিক শ্রমনির্ভর কাজের দিকে ঝুঁকছে এবং সফলতার পরিচয় দিচ্ছে।

গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্তি

প্রতিবন্ধীদের সমাজে কার্যকরভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে গণমাধ্যম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সংবাদ সংগ্রহ, সংবাদ উপস্থাপন, সম্পাদনা, ভিডিও ধারণ, প্রকাশনা ও ফটোগ্রাফির মতো ক্ষেত্রে যুক্ত করা সম্ভব। গণমাধ্যমে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করলে সমাজে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং তারা আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে।

প্রতিবন্ধীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি

সমাজের একটি অংশ এখনো প্রতিবন্ধীদের মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করতে নারাজ। তারা কেবল অবজ্ঞা ও অবহেলার শিকার হয়। অথচ ইতিহাস বলে, প্রতিবন্ধীদের অবদান অনেক ক্ষেত্রেই সমাজকে বদলে দিয়েছে। এক ভোটের ব্যবধানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়া থমাস জেফারসন কিংবা ক্ষুদ্র লেংড়া মশার কামড়ে ফেরাউনের মৃত্যু, এই ঘটনাগুলোই বলে দেয় যে ছোট প্রচেষ্টাও বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

স্টিফেন হকিং শারীরিক অক্ষমতা সত্ত্বেও ব্ল্যাক হোল ও কোয়ান্টাম তত্ত্বের মতো জটিল গবেষণা করেছেন। চিত্রশিল্পী বেনেতো বুফো ও ফ্রিদা কাহলোর মতো প্রতিভাবান শিল্পীরা প্রতিবন্ধী হয়েও বিশ্ব জয় করেছেন। তেমনি আমাদের সমাজেও অনেক প্রতিভাবান প্রতিবন্ধী রয়েছেন, যাদের সঠিক সুযোগ ও সহায়তা দেওয়া গেলে তারা নিজেদের প্রতিভা প্রকাশ করতে পারবেন।

সমাজ পরিবর্তনে আমাদের করণীয়

প্রতিবন্ধীদের প্রতি করুণা দেখানো বা সাময়িক সাহায্য প্রদানই যথেষ্ট নয়, বরং তাদের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে। যথেষ্ট সম্পদশালী হয়েও অনেকে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে না, ফলে অনেক প্রতিবন্ধী ভিক্ষাবৃত্তির দিকে ধাবিত হয়। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, যাতে তারা সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারে।

প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি করতে হবে এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে ব্রেইল, সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ, অডিও বুক ও কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নত করতে হবে। পাশাপাশি, প্রযুক্তিগত বিভিন্ন ডিজিটাল টুলস তাদের ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরি করতে হবে।

পরিবারকেও মানসিক ও আর্থিক সহায়তা দিতে হবে, যাতে তারা প্রতিবন্ধী সদস্যদের যত্ন ও শিক্ষায় গুরুত্ব দেয়। এই লক্ষ্যে সরকার, এনজিও এবং সমাজের বিভিন্ন সংগঠনকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

উপসংহার

প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। তারা সমাজের বোঝা নয়, বরং যথাযথ সহায়তা পেলে তারাও দেশের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের সামান্য সহানুভূতি, সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রতিবন্ধীদের জন্য এক বিশাল শক্তি হয়ে উঠতে পারে। এই শক্তির মাধ্যমেই তারা বিশ্ব জয় করতে সক্ষম হবে।