বাংলাদেশে ধান চাষ: সমস্যা ও সমাধান

User

শিক্ষার্থী , University of Rajshahi

Student


রেজী:
BCW24120007

প্রকাশিত:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশে ধান চাষ: সমস্যা ও সমাধান

 

বাংলাদেশে ধান একটি প্রধান খাদ্যশস্য, যা কৃষির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফসল। তবে ধান চাষে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়, যা উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। নিচে ধান চাষের প্রধান সমস্যা ও তাদের সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১. প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত সমস্যা

ক) অনাবৃষ্টি ও খরা সমস্যা:

  • পানির অভাবে ধানের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
  • ধানের ফলন কমে যায় এবং গাছ শুকিয়ে যায়।

সমাধান:

  • খরা-সহনশীল জাতের ধান চাষ করা (যেমন: BRRI dhan 56, BRRI dhan 57)।
  • সেচের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, যেমন গভীর নলকূপ, পুকুর বা খাল থেকে পানি সরবরাহ।
  • মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখা।

খ) অতিবৃষ্টি ও বন্যা সমস্যা:

  • ধানের চারা মরে যায় বা পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যায়।
  • দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ধানের শিকড় পচে যেতে পারে।

সমাধান:

  • জলাবদ্ধতা সহনশীল ধানের জাত চাষ করা (যেমন: BRRI dhan 51, BRRI dhan 52)।
  • উঁচু জমিতে ধান চাষ করা বা সঠিক পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা।
  • বন্যার আগাম পূর্বাভাস নিয়ে ধান চাষের পরিকল্পনা করা।

২. রোগবালাই সংক্রান্ত সমস্যা

ক) ব্লাস্ট রোগ সমস্যা:

  • ধানের পাতা ও শীষে দাগ পড়ে এবং গাছ শুকিয়ে যেতে পারে।

সমাধান:

  • প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করা (যেমন: BRRI dhan 71, BRRI dhan 74)।
  • সুষম সার প্রয়োগ করা এবং নাইট্রোজেন সার কম ব্যবহার করা।
  • প্রয়োজনে ব্যাভিস্টিন বা নেটিভো জাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করা।

খ) বাদামী দাগ রোগ সমস্যা:

  • ধানের পাতা ও শীষে বাদামী দাগ দেখা যায়, যা ফলন কমিয়ে দেয়।

সমাধান:

  • সুষম সার ব্যবহার করা (বিশেষ করে পটাশ ও দস্তা)।
  • কার্বেনডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করা।

৩. পোকামাকড় জনিত সমস্যা

ক) মাজরা পোকা সমস্যা:

  • ধানের কান্ডের মধ্যে ঢুকে গিয়ে গাছ মেরে ফেলে।
  • ফলে ধানের শীষ বের হতে পারে না।

সমাধান:

  • ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা।
  • প্রয়োজনীয় কীটনাশক প্রয়োগ করা (যেমন: কার্টাপ বা কুইনালফস)।
  • নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ করা।

খ) পামরি পোকা সমস্যা:

  • পাতা খেয়ে ফেলে এবং ধানের উৎপাদন কমে যায়।

সমাধান:

  • হাত দিয়ে পোকা ধরে ধ্বংস করা।
  • অ্যালোক্সি বা ইমিডাক্লোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগ করা।

৪. মাটির উর্বরতা সংক্রান্ত সমস্যা

ক) মাটির পুষ্টির অভাব সমস্যা:

  • দস্তা, নাইট্রোজেন, পটাশ, ফসফরাস ইত্যাদির অভাবে ধানের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
  • শীষ ছোট হয়ে যায় ও দানায় পূর্ণতা আসে না।

সমাধান:

  • মাটির পরীক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করা।
  • জৈব সার (গোবর, কম্পোস্ট) এবং সবুজ সার ব্যবহার করা।
  • দস্তার ঘাটতি থাকলে জিংক সালফেট প্রয়োগ করা।

৫. আগাছা সংক্রান্ত সমস্যা

ক) আগাছার অতিরিক্ত বৃদ্ধি সমস্যা:

  • আগাছা ধানের পুষ্টি গ্রহণ করে, ফলে ফলন কমে যায়।

সমাধান:

  • আগাছা দমনকারী হরমোন (যেমন: বিউটো ক্লোর বা প্রেফক্স) প্রয়োগ করা।
  • নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করা এবং হাত দিয়ে তুলে ফেলা।

৬. শ্রমিক সংকট ও আধুনিক প্রযুক্তির অভাব সমস্যা:

  • ধান রোপণ ও কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়।
  • কৃষকেরা আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে উৎপাদন বাড়াতে পারে না।

সমাধান:

  • আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা (যেমন: ধান রোপণ মেশিন, হারভেস্টার)।
  • সরকার ও এনজিওদের কৃষি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
  • কৃষি প্রণোদনা ও ভর্তুকি নিশ্চিত করা।

উপসংহার

ধান চাষে বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও সঠিক পরিকল্পনা ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করলে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো, উন্নত জাতের ধান চাষ করা, সার ও কীটনাশক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা, এবং যথাযথ সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সরকারের কৃষি বিভাগ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কৃষকদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।