রেনেসাঁ: আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনকারী আন্দোলন

User

শিক্ষার্থী , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থী


রেজী:
BCW25010001

প্রকাশিত:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

 

রেনেসাঁ: আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনকারী আন্দোলন

রেনেসাঁ (Renaissance) বা পুনর্জাগরণ একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন যা ১৪শ থেকে ১৭শ শতাব্দী পর্যন্ত পশ্চিম ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। এই সময়কালে শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, এবং দর্শনের ক্ষেত্রে নতুন চিন্তা ও আবিষ্কার ঘটে, যা আধুনিক ইউরোপের ভিত্তি গঠন করে। রেনেসাঁর মাধ্যমে মানবতার প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়, যেখানে মানুষের মর্যাদা, সম্ভাবনা এবং ব্যক্তিগত অর্জনের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়।

রেনেসাঁর উৎপত্তি ও প্রেক্ষাপট

রেনেসাঁ শব্দের অর্থ পুনর্জন্ম। এটি ইউরোপের মধ্যযুগীয় কুসংস্কার ও অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার প্রতীক। মধ্যযুগে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি শোচনীয় অবস্থায় পৌঁছেছিল, যা স্বাধীন চিন্তার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করেছিল। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে প্রাচীন গ্রিক ও রোমান জ্ঞানচর্চা নতুন করে শুরু হয়।

বিশেষত ইতালি রেনেসাঁর কেন্দ্রীয় ভূমিকায় ছিল। ভূমধ্যসাগরের কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় ইতালি ব্যবসা ও সংস্কৃতির কেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পর সেখানকার পণ্ডিতরা ইতালিতে এসে জ্ঞান ও শিল্পচর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করেন।

রেনেসাঁর বৈশিষ্ট্য

১. মানবতাবাদ (Humanism):

মানবতাবাদ ছিল রেনেসাঁর প্রধান বৈশিষ্ট্য। এটি মানুষের জ্ঞান, সৃজনশীলতা এবং সম্ভাবনার উপর জোর দেয়। দান্তে, পেত্রার্ক এবং বোক্কাচিওর মতো সাহিত্যিকরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে মানবতাবাদের প্রচার করেন।

২. শিল্পের পুনর্জাগরণ:

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, মাইকেল এঞ্জেলো, রাফায়েল প্রমুখ শিল্পীরা এই সময়ে যুগান্তকারী চিত্রকর্ম তৈরি করেন। দা ভিঞ্চির মোনালিসা এবং শেষ ভোজ চিত্রকর্মগুলো আজও বিশ্বসেরা।

৩. বিজ্ঞানের বিকাশ:

রেনেসাঁ বিজ্ঞানচর্চায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বতত্ত্ব এবং গ্যালিলিওর জ্যোতির্বিজ্ঞানের আবিষ্কার বিজ্ঞানকে নতুন যুগে প্রবেশ করায়।

৪. মুদ্রণযন্ত্রের উদ্ভাবন:

জোহানেস গুটেনবার্গ ১৪৫০ সালে মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার করেন। এর ফলে বই প্রকাশ সহজ হয় এবং জ্ঞান সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।

৫. ধর্মীয় সংস্কার:

রেনেসাঁর সময়ে মার্টিন লুথারের নেতৃত্বে প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার শুরু হয়, যা ক্যাথলিক চার্চের প্রভাব হ্রাস করে।

রেনেসাঁর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব

রেনেসাঁ আধুনিক ইউরোপের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের মূল ভিত্তি স্থাপন করে। এটি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, যুক্তিবাদ, এবং শিক্ষার গুরুত্ব বাড়ায়।

১. শিক্ষার প্রসার:

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধর্মীয় গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে বিজ্ঞান, শিল্প এবং দর্শনের উপর জোর দেয়।

২. সামাজিক পরিবর্তন:

রেনেসাঁর ফলে মানুষ চিন্তায় আরও স্বাধীন হয়। গির্জার প্রভাব কমে যায় এবং রাজতন্ত্র শক্তিশালী হয়।

৩. জাতীয় রাষ্ট্রের বিকাশ:

সামন্তবাদ থেকে বেরিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্রের বিকাশ ঘটে।

উপসংহার

রেনেসাঁ শুধু একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন নয়, এটি মানুষের জ্ঞান, সৃজনশীলতা এবং সম্ভাবনার সীমাহীন সম্ভাবনা উপলব্ধি করার প্রেরণা। এটি আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করেছে। আজও রেনেসাঁ আমাদের জন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণার উৎস।

 

---