সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম: সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

User

শিক্ষার্থী , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

None


রেজী:
BCW24120001

প্রকাশিত:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

 

 

 

 

 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম: সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

 

বর্তমান বিশ্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। সকালে ঘুম ভাঙা থেকে রাতে ঘুমানোর আগে পর্যন্ত ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব এবং লিংকডইনের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী। এগুলো কেবল বিনোদনের জন্য নয়; জ্ঞানার্জন, পেশাগত উন্নয়ন এবং সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু একই সাথে অপব্যবহারের মাধ্যমে এটি সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রশ্ন হলো, কেমন হতো যদি এগুলোর ব্যবহার আরও গঠনমূলক হতো?

শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন

কেমন হতো যদি পড়াশোনার সময় টিকটক বা টাইম কিলার কনটেন্ট এড়িয়ে শিক্ষামূলক কনটেন্ট, ওয়েবিনার, অনলাইন কোর্স এবং ডকুমেন্টারির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের জ্ঞান বৃদ্ধি করতো? যদি মাধ্যমগুলো শিক্ষার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতো, তাহলে শিক্ষার্থীরা সহজেই গ্লোবাল একাডেমিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারতো। ফেসবুক স্ক্রোল করার পরিবর্তে গঠনমূলক আলোচনায় অংশ নিয়ে বা নতুন স্কিল শেখার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলে শিক্ষার মান এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন আরও গতিশীল হতো।

বেকারত্ব এবং পেশাগত নেটওয়ার্কিং

কেমন হতো যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বেকারদের জন্য দক্ষতা উন্নয়নের একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠতো? লিংকডইনের মতো পেশাজীবীদের প্ল্যাটফর্মে সময় ব্যয় করে যদি চাকরি বা উদ্যোক্তা হওয়ার পথ খোঁজা যেত, তাহলে বেকারত্বের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেত। দক্ষতা প্রচার, আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং পেশাগত নেটওয়ার্ক তৈরির মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তারা আর্থিকভাবে আরও স্বাবলম্বী হতে পারতেন।

সামাজিক সচেতনতা এবং গুজব প্রতিরোধ

যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো গুজব রটানোর কারখানা না হয়ে মানবাধিকার, নারীর অধিকার এবং পরিবেশ সংরক্ষণের মতো বিষয়গুলোতে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হতো, তাহলে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতো। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সংকটের সময়, গুজব না ছড়িয়ে যদি সহায়তার আহ্বান জানানো এবং জরুরি তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া যেত, তাহলে অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো।

সৃজনশীলতার বিকাশ

কেমন হতো যদি মানুষ এসব মাধ্যমকে তাদের মেধা, সৃজনশীলতা এবং প্রতিভা প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতো? লেখালেখি, ছবি আঁকা, ফটোগ্রাফি, মিউজিক বা ভিডিও তৈরির মাধ্যমে মানুষ নিজের প্রতিভা বিশ্বব্যাপী প্রদর্শন করতে পারতো।

পারিবারিক এবং সামাজিক বন্ধন

প্রযুক্তি যেখানে আন্তসম্পর্ক দুর্বল করে দিচ্ছে, সেখানে কেমন হতো যদি সোশ্যাল মিডিয়া পারিবারিক এবং সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার মাধ্যম হয়ে উঠতো?

নৈতিকতা এবং সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইতিবাচক দিকগুলো কাজে লাগাতে হলে নৈতিকতার চর্চা এবং সচেতনতার বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপব্যবহারের ফলে এটি ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে এটি কেবল প্রযুক্তির নয়, মানবিক উন্নয়নেও যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে।

লেখক:
মো. ইমরুল ইউসুফ
শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


---