জাতীয় উন্নয়নে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি

User

শিক্ষার্থী , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

None


রেজী:
BCW24120001

প্রকাশিত:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

 

 

জাতীয় উন্নয়নে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্ব


 

বাংলাদেশ: বহুধর্মী ও বহুসাংস্কৃতিক একটি দেশ

বাংলাদেশ একটি বহুধর্মী ও বহুসাংস্কৃতিক দেশ। এখানে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে পাশাপাশি বসবাস করছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই ঐতিহ্য আমাদের জাতীয় অগ্রগতির মূলভিত্তি। তবে মাঝে মাঝে কিছু অশুভ শক্তি এই সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করে, যা জাতীয় উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করে।

জাতীয় উন্নয়নের জন্য একতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার গুরুত্ব

জাতীয় উন্নয়নের জন্য একতা, সমতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার গুরুত্ব অপরিসীম। একটি সমাজের সব ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে যদি সম্প্রীতি বজায় থাকে, তাহলে সেই জাতি দ্রুত অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বলতে বোঝায়, সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে শান্তি, সৌহার্দ্য এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রাখা। এটি শুধু সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যই নয়, বরং অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

 

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকলে সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। একটি শান্তিপূর্ণ সমাজে মানুষ নিজেদের দক্ষতা ও সময় জাতীয় উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারে, তবে অশান্তি এবং সংঘাতের পরিবেশ উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। জাতীয় উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাধ্যমে সমাজে বিনিয়োগ ও উৎপাদনের পরিবেশ তৈরি হয়। বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ যখন একত্রে কাজ করে, তখন উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি থাকলে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সংঘাত এড়ানো যায়। এটি সমতা এবং ন্যায়বিচারের সংস্কৃতি তৈরি করে, যা একটি জাতিকে উন্নতির শীর্ষে নিয়ে যেতে পারে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র

লক্ষ করলে দেখা যায়, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাঝে বিভেদ তৈরি করার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে। এজন্য কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটে গেছে যা মোটেই কাম্য নয়। এই ষড়যন্ত্র এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আছে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা হলেও আমরা লক্ষ করেছি। কিছু গোষ্ঠী ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে অপব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক অশান্তি সৃষ্টি করে। এটি শুধু সামাজিক ভাঙনই নয়, জাতীয় অগ্রগতির পথেও বাধা সৃষ্টি করে।

রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্বার্থ বড় ভূমিকা পালন করে। কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী তাদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এর বড় উদাহরণ গত ৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে এবং এর আগেও এমনটা হয়েছে।

শিক্ষা ও সচেতনতায় ভূমিকা

শিক্ষার অভাব এবং কুসংস্কার মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে অনেক সময় সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করা হয়। এতে সমাজে অস্থিরতা বাড়ে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য সম্প্রীতি নষ্ট করে। এটি মানুষকে একে অপরের প্রতি সন্দেহপ্রবণ করে তোলে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে সচেতনতামূলক শিক্ষা প্রচার করতে হবে। সব ধর্মের প্রতি সহিষ্ণু মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।

ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা ও গণমাধ্যমের দায়িত্ব

ধর্মীয় নেতারা সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার প্রচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নিজেদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সম্প্রীতি বজায় রাখতে কাজ করা।

সমাজে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তা

বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। এটি তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব এবং শ্রদ্ধার সম্পর্ক তৈরি করবে। গণমাধ্যমকে গুজব ও বিভ্রান্তি এড়াতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

উপসংহার

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের জাতীয় উন্নয়নের পথকে সুগম করে, এবং এটি সমাজে শান্তি, ঐক্য এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করে। একতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার মাধ্যমে আমরা একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়তে পারি।

লেখক:
মো ইমরুল ইউসুফ, শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।