সবুজ পাহাড়ে ঢাকা এবং মেঘের রাজত্ব নিয়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাজেক ভ্যালি। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সর্বউত্তরের এই অঞ্চলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঋতুভেদে নানারূপে সজ্জিত হয়। মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত সাজেককে বলা হয় "রাঙামাটির ছাদ," এখান থেকে পুরো রাঙামাটি চোখে পড়ে। এর আয়তন ৭০২ বর্গমাইল।
খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার, দীঘিনালা থেকে ৪৯ কিলোমিটার এবং বাঘাইহাট থেকে ৩৪ কিলোমিটার। সাজেকের উত্তরে ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম এবং পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা। সাজেকে রয়েছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিজিবি ক্যাম্প এবং এর শেষ পাড়া হলো কংলক পাড়া। লুসাই জনগোষ্ঠীর বসবাস এই কংলক পাহাড় থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় এবং কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তিস্থল দেখা যায়।
সাজেকের দর্শনীয় স্থানসমূহ
১. হাজাছড়া ঝরনা:
হাজাছড়া ঝরনাটি স্থানীয়ভাবে রিছাং নামে পরিচিত। এর নির্মল জলধারা এবং আশেপাশের সবুজ প্রকৃতি দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।
২. আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত্য বৌদ্ধ বিহার:
হাজাছড়া ঝরনা পার হলেই এই বিহারটি অবস্থিত। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং এর সৌন্দর্য দর্শকদের মন কাড়ে। হিন্দু আদিবাসীরা এখানে প্রার্থনা করতে আসেন।
৩. আলুটিলা গুহা:
বৌদ্ধ বিহার থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত এই গুহা রহস্যময়তার জন্য বিখ্যাত। এর ভেতরে ঘন অন্ধকার, আর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে। স্থানীয়দের কাছে এটি রহস্যময় গুহা নামে পরিচিত।
৪. কমলক ঝরনা:
সাজেকের রুইলুই পাহাড় থেকে দুই আড়াই ঘণ্টার পথ দূরে অবস্থিত এই ঝরনা। পিদাম তৈসা ঝরনা বা সিকাম তৈসা ঝরনা নামেও এটি পরিচিত।
৫. কংলক পাড়া:
ভারতের লুসাই পাহাড়ের উপরে অবস্থিত এই গ্রামে তিনটি লুসাই জনগোষ্ঠী বাস করে। এখান থেকে রুইলুই পাহাড়ের দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম। দূর থেকে লাল ও নীল ঘরগুলো যেন পোস্টারের মতো দেখায়।
৬. রুইলুই পাড়া শিব মন্দির:
সাজেকের প্রবেশ মুখে অবস্থিত এই সুপ্রাচীন মন্দিরটি স্থানীয়ভাবে রুইলুই পাড়া শিব মন্দির নামে পরিচিত।
উপসংহার
সাজেক ভ্যালি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য। সবুজ পাহাড়, ঝরনা, গুহা এবং বিভিন্ন ঐতিহ্যের মিশেলে সাজেক তার দর্শনার্থীদের হৃদয়ে এক স্থায়ী ছাপ রেখে যায়। এটি শুধু ভ্রমণের স্থান নয়, বরং প্রকৃতির সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের অপূর্ব সমন্বয়।