সুফিবাদ: আধ্যাত্মিকতা ও সমসাময়িক অবক্ষয়

User

শিক্ষার্থী , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

None


রেজী:
BCW24120002

প্রকাশিত:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

সুফিবাদ: আধ্যাত্মিকতা ও সমসাময়িক অবক্ষয়

 

আধ্যাত্মিক ধ্যান ও জ্ঞানের মাধ্যমে সৃষ্টি ও স্রষ্টার সম্পর্ক নিরূপণ এবং আত্মার পরিশুদ্ধিই সুফিবাদের মূলকথা। মানসিক ও নৈতিক উন্নতি সাধনে তাদের কৃতিত্ব অসীম। খাজা মঈনউদ্দীন চিশতি (র.)-এর চিশতিয়া, আব্দুল কাদের জিলানী (র.)-এর কাদেরিয়া, শেখ বাহাউদ্দীন জাকারিয়া (র.)-এর সোহরাবর্দীয়া, খাজা বাহাউদ্দীন নকশ (র.)-এর নকশবন্দিয়া, এবং শরফুদ্দিন আলী কলন্দিয়া (র.)-এর কলন্দিয়া তরীকাসহ অসংখ্য তরীকায় সুফিবাদের পথ প্রসারিত।

সুফিবাদের প্রসার ও আদর্শ

পশ্চিম এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে সুফিবাদের যাত্রা শুরু হলেও এটি দ্রুতই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানেই অশান্তি বা অত্যাচার বিরাজ করত, সেখানেই ইসলামের শান্তি ও উদারতার বার্তা নিয়ে সুফিরা উপস্থিত হতেন। তাদের জ্ঞানের উৎস ছিল কুরআন ও হাদিস। খানকাগুলো ছিল জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র, যেখানে দূর-দূরান্ত থেকে শিষ্যরা দীক্ষা নিতে আসত।

 

সুফিরা কখনো অন্য ধর্মের প্রতি বিরোধিতা না করে ইসলামের সৌন্দর্য ও উদারতা তুলে ধরতেন। বাংলায় ইলিয়াস শাহী আমলে হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধেও সুফিরা নৈতিক শক্তি দিয়ে ইসলামের প্রসার ঘটান। তাদের জীবনাচার ও নৈতিকতার ফলে বহু অমুসলিম, হিন্দু, এবং নিপীড়িত মানুষ ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নেয়।

সুফিবাদ বনাম সন্ন্যাসবাদ

সুফিবাদকে সন্ন্যাসবাদের সাথে মিলানো ভুল। সন্ন্যাসবাদে সংসার ত্যাগ করে স্রষ্টার চিন্তায় নিমগ্ন থাকা হয়। তবে সুফিবাদে সংসার ত্যাগের পরিবর্তে আল্লাহর জন্য নিজেদের উৎসর্গ করে ইসলামের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

সুফিদের জনহিতকর কার্যাবলি

পারস্য ছিল সুফিবাদের উর্বর ভূমি। পরবর্তীতে ভারতবর্ষ এবং বাংলায় শাহ সুলতান কমরুদ্দীন (র.), হযরত শাহজালাল (র.), এবং বাহাউদ্দীন জাকারিয়ার মতো সুফিরা দূর-দূরান্ত থেকে আসেন। তাদের খানকার পাশে গরিব ও অসহায় মানুষের জন্য বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা ছিল। এসব উদ্যোগ সকল ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত ছিল।

সমসাময়িক অবক্ষয়

বর্তমানে সুফিবাদের নামে ভণ্ডামি ও বিকৃতি বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে গাঁজা, ফেনসিডিল, মদে আসক্ত হয়ে মাজারে অবস্থান নেয় এবং ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে দূরে সরে যায়। খানকাগুলো এখন অনেক জায়গায় আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে।

কাওয়ালী গানের রেওয়াজ ও মরমীবাদের ভুল ব্যাখ্যা ইসলামি সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ধরনের প্রবণতা ইসলামের মূল শিক্ষার সাথে বৈপরীত্য সৃষ্টি করছে।

উপসংহার:
ইসলামের প্রচারে সুফিদের ত্যাগ, কর্ম, এবং মানবসেবার ভূমিকা স্মরণীয়। তবে সমসাময়িক সমাজে সুফিবাদের বিকৃত রূপ রোধে সচেতনতা এবং প্রকৃত ইসলামী শিক্ষার প্রচার অপরিহার্য। ইসলামের প্রকৃত আদর্শ রক্ষা করতে হলে এই অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।