বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের কারণে উন্নয়নশীল ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জলবায়ু বলতে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট স্থানের গড় আবহাওয়া, তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা এবং বাতাসের বৈশিষ্ট্যগুলোকে বোঝানো হয়। গত দুই দশকে বাংলাদেশে প্রায় ১৮৫টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হেনেছে। সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ ও প্রকৃতি। যদিও বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনে বাংলাদেশের ভূমিকা মাত্র ০.৪৭%, তবুও ঝুঁকিপূর্ণ ১৯২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ক্লাইমেট ট্রাস্ট তহবিল গঠন করে। এই তহবিলের আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪৮ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে ৮০০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার
জ্বালানি খাত বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। বিদ্যুৎ ও তাপ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব কমবে। জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে ডিকার্বোনাইজেশন প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি।
যানবাহনে জ্বালানি পরিবর্তন
বর্তমানে যানবাহনে পেট্রোল ও ডিজেলের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমনের অন্যতম কারণ। এ ক্ষেত্রে ইলেকট্রিক যানবাহনের ব্যবহার এবং হাইড্রোজেন জ্বালানির উন্নয়ন পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে।
গ্রিনহাউজ গ্যাস নিয়ন্ত্রণ
বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধি পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। এই গ্যাস দূরীকরণের জন্য কৃত্রিম প্রযুক্তি এবং সচেতন কার্যক্রম চালানো দরকার।
করণীয়
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে গাছ লাগানো, ইটভাটা কমানো, প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির উন্নয়ন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
উপসংহার:
জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের শক্তিশালী উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করাই হবে টেকসই উন্নয়নের পথে অগ্রগামী পদক্ষেপ।