স্কুল লাইফ দিয়েই মানুষ শিক্ষার জগতে প্রবেশ করে,নতুন কিছু শিখে,আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু নয় তবে আমার স্কুল নিতান্তই প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় অনেকটাই আধুনিকতা থেকে দূরে ছিলাম,আমাদের স্কুলের একটু সামনেই কলেজ ছিলো যেখানে উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রী করানো হতো,আমার ধারণা ছিলো স্কুল লাইফ শেষে কলেজ তারপর বোধহয় ডিগ্রী করা, এই হলো মানুষের শিক্ষা জীবন। কিন্তু এই ধারণা যে নিতান্তই আমার মফস্বলে থাকার কারণে এসেছে তা বুঝতে পারি কলেজে পা রাখার পর থেকে। ঐ স্কুলের সামনের কলেজটাতেই বোধহয় ভর্তি হতাম যদি না মামা জোর করে গাজীপুরে না নিয়ে যেতো,ঐ যে নিজের গন্ডি থেকে বেরিয়ে বাহিরের জগতটাকে দেখতে পারা তার থেকেই পড়ালেখার অনেকখানি জানতে পারা,যখন মামা বললো "ইমরান তোমার গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে মেরিট এসেছে " তখন আমার চাইতে উনিই বেশি খুশি হয়েছিলো কারণ ঐ কলেজের গুরুত্ব তখনও আমার কাছে অজানা,যাইহোক কলেজে যাওয়ার পর পরই আমার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্রতার বিষয়গুলো পরিস্কার হতে শুরু করে, কারণ কলেজের প্রফেসররা প্রতিটি ক্লাসেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের উপকারীতা নিয়ে লেকচার দিতেন, যেনো এটিও একাডেমিক লেসনেরই অংশ। আর তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার স্বপ্ন জাগে। যদিও আমি খুব কম পরিশ্রম করে ফলাফল পেতে চাওয়া ছাত্র, অনেকটা চিন্তা আছে চেতনা নেই এমন। এডমিশনের প্রিপারেশনও এইচএসসির রেজাল্ট পাওয়ারও অনেক পর থেকে শুরু করি,আর ঐ যে বললাম আমি কম পড়ে চান্স পেতে চাওয়া ছাত্র, দেখা গেলো আমি কোচিং এ ক্লাস করতাম বাসায় এসে আর নোটস্ গুলো খুলেও দেখতাম না,তবে কোচিং এর ভাইয়েরা বলতো ঢাবির জন্য প্রিপারেশন নিলে বাকিগুলোর প্রিপারেশনও অটোমেটিক্যালি হয়ে যাবে তাই শুধু ঢাবির প্রিপারেশনই নিয়েছিলাম,আর প্রিপারেশন হলো শুধুমাত্র কোয়েশ্চন ব্যাংক সলভ করা।
যেই বলা সেই কাজ,এক্সামের আগেও এই কোয়েশ্চন ব্যাংক পড়েই পরিক্ষা দিতে গেলাম,অনেক ইচ্ছে ছিলো ঢাবিতে পড়ার কিন্তু এক্সামে নিজের বোকামির জন্য তা আর হয়ে উঠেনি,তারপর আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম যে আমাকে স্বায়ত্তশাসিত বাকি ২টার একটায় চান্স পেতেই হবে,রাবিতে দিলাম, মেরিট ১০০০ এর উপরে ছিলো সাবজেক্ট আসেনি,এর পর দিলাম চবিতে,আর চবির প্রশ্নপত্র দেখে আমার পুরো দুনিয়া ঘোলাটে লাগতে শুরু করে,কারণ আমার জানা ছিলো যে চবি গতানুগতিক ধারা অনুসরণ করে,কিন্তু সেবার একেবারেই ভিন্ন প্রশ্ন করেছিলো,আমি ভয়ে ভয়ে শুধুমাত্র ৬৫/৭০ টা নৈর্ব্যক্তিক দাগিয়েছিলাম,আর হল থেকে বের হয়েই নিজের কান্নাকে দমিয়ে রাখতে পারিনি কারণ চবিতে চান্স পাওয়ার জন্য ১২০ এ সর্বনিন্ম ৯০ পেতে হয়,আর আমি যেখানে আন্সারই করে এসেছি ৬৫ এর, এরপর আর কি করার, স্বায়ত্তশাসিতের আশা ছেড়ে গুচ্ছের পথে পা বাড়ালাম,আর এক্সামও অনেক ভালো হয়। কিন্তু উপরওয়ালা হয়তো আমার মনের কথা শুনেছে,চবির প্রশ্ন কঠিন হওয়ায় সেবার কাট মার্কস ৭০ এর মতন ছিলো,আমার এসেছিলো ৭৩, আর আমার তো এক্সাইটমেন্টে দিশেহারা অবস্থা, সাথে সাথে ২রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলাম,আর সাবজেক্ট চয়েজ দিলাম,এখন আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৫ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী, সম্মানের অর্ধেকে পা রেখেছি,চবির প্রাকৃতিক নিসর্গতা আর শাটলের সাইরেনের সাথে এতগুলো হেক্টিক সময় কত তড়িঘড়ি করে পার হয়ে গেলো। এখন সফলভাবে গ্রেজুয়েশন শেষ করে পরিবারের হাল ধরাই যেন আমার নেক্সট মিশন।
লেখক : মো. ইমরান রায়হান ইমু
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
৩য় বর্ষ( ৫ম সেমিস্টার)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।