যেখানে দেখা মেলে মাচাং ঘর

User

শিক্ষার্থী , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থী


রেজী:
BCW24120003

প্রকাশিত:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম। যেখানে একমাত্র দেখা মিলে "মাচাং ঘর"। মাচাং ঘর বলতে পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়িরা বাঁশ দিয়ে থাকার জন্য যে ঘর তৈরি করে থাকেন সেটাকে বোঝানো হয়ে থাকে। পাহাড়ের বিভিন্ন ভয়ংকর প্রাণী থেকে রক্ষা পেতে এই ঘরগুলো উঁচু করে তৈরি করা হয়ে থাকে। সাধারণত মাটি থেকে তিন-চার ফুট উচ্চতায় এইসব মাচাং ঘরগুলো তৈরি করা হয়। পৃথিবীর ফুসফুস যদি আমাজন হয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশের ফুসফুস এই পার্বত্য অঞ্চল। যেথায় এক সময় যেমন ভয়ংকর ছিল ঠিক সুন্দরের দিকেও ভয়ংকর বটে। কারণ বাংলাদেশের মানচিত্রে খেয়াল করলে দেখা যায় পুরো পার্বত্য অঞ্চলে যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বনানী তা সমতল অঞ্চলে দেখা যায় না। আদিবাসীদের বসবাস শুরু হওয়ার সাথে শত কিলো পেরিয়ে পাড়া মহল্লা তৈরি হতে থাকে এই পার্বত্য অঞ্চলে। যে অঞ্চলে দেখা যায় ভিন্ন এই প্রকৃতির সাঝে ভিন্ন বাড়িঘর। যাকে মাচাং ঘর বলে আমরা চিনি। সেই মাচাং ঘর পাহাড়ি আদিবাসীদের সংস্কৃতির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জরিয়ে আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এইসব মাচাং ঘরগুলো এখন বিলুপ্তির পথে। শহরের আধুনিকতার সাথে সাথে যুগে যুগে মানুষের ইচ্ছার পরিবর্তনের সাথে এখানকার মানুষের থাকার ব্যবস্থাও পরিবর্তন হয়েছে। অবশ্য এটা কারোর উপর দোষারোপ করাটা আমার ভূল হবে। যুগের পরিবর্তনের সাথে এসব হয়েছে সেটা নিখুঁত ভাবায় আমাদের একবার হলেও। দিনটি ছিল মঙ্গলবার। ২৫ শে ডিসেম্বর খ্রীস্টানদের বড় দিনে গিয়েছিলাম লতাপাহাড় নামক একটি গ্রামে। দূর্গম পাহাড়ের উঁচুতে অবস্থিত এই গ্রামটি। চারপাশে ঘন বনের সমারোহে উঁচু উঁচু মাচাং ঘরগুলো দেখা মিলে। এসব দৃশ্য যেন এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার বেঁচে থাকার প্রতীকী প্রকাশ পায়।এই গ্রামে যেতে হলে আপনাকে রাঙ্গামাটি থেকে বিলাইছড়ি উপজেলায় যেতে হবে। এরপর যেতে হবে বিলাইছড়ি থেকে ফারুয়া নামক ইউনিয়নে। দূর্গম এই অঞ্চলের মানুষের বেঁচে থাকার জনজীবন দেখা মিলবে আপনার চোখে। ফারুয়া ইউনিয়নের ওড়াছড়ি থেকে ৪ কি.মি. পথ অতিক্রম করে পাহাড়ের উঁচুতে গ্রামটি দেখা মিলবে। গ্রামটির পুরো নাম লতাপাহাড় পাংখোয়া পাড়া। যেখানে বেশিরভাগই পাংখোয়া জনগোষ্ঠীরা বসবাস করে থাকেন। বাংলাদেশের ৫০ টির আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে পাংখোয়া তার মধ্যে একটি। সাধারণত রাঙ্গামাটিতে এদের বসবাস দেখা যায়। এছাড়াও ভারতের মিজোরামে পাংখোয়াদের বসবাস রয়েছে। এই গ্রামটি দুটি অংশে বিভক্ত। যেটি এতক্ষণ বর্ণনা করলাম সেটি একটি অংশ।

 

মাচাং ঘর

 

যা লতাপাহাড় পাংখোয়া পাড়া।আবার অপর অংশটি শুধু লতাপাহাড় নামে পরিচিত। যেখানে মারমা'দের বসবাস বেশি। বাংলাদেশের মারমা সম্প্রাদায় সংখ্যায় দ্বিতীয়। সাধারণত বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে এদের বসবাস। শিক্ষায় এগিয়ে গেলেও আজও দেখা মেলে নিরক্ষারতার হার। যেথা লতাপাহাড় নামক গ্রামে আসলে নিমিষেই বোঝা যাবে। পাহাড়ের উঁচুতে সবার থাকার ঘরগুলোই উঁচু করে তৈরি করা। যাকে মাচাং ঘর বলা হয়। এখানকার শতভাগ মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হলো জুম চাষ। যার কারণে এই গ্রামে আজও দেখা মেলে এসব মাচাং ঘরগুলো। মানুষ পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকে এমনভাবে পরিবর্তন করে যা নিজের জনজীবনের ইঙ্গিতটুকু পর্যন্ত পরিবর্তন করে। পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষার হার কিছুটা বৃদ্ধির সাথে সাথে দেখা যায় মাচাং ঘর থেকে কাঠের ঘর।কাঠের ঘর থেকে মাটির ঘর। আবার মাটির ঘর থেকে উঁচু দালান কোঠা দাঁড়িয়ে আছে সবুজ পাহাড়ের লতাপাতাকে ঘিরে। এসব পরিবর্তনের আধুনিক ছোঁয়ায় মাচাং ঘরগুলো যে বিলীন হয়ে যাচ্ছে আমরা তা দেখছি কিন্তু উপলব্ধি করছি না। কারণ তার পিছনে প্রধান কারণ আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন। পার্বত্য চট্টগ্রামের দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চল যেখানে আজও মাচাং ঘর দেখা যায় তার মধ্যে লতাপাহাড় অন্যতম। পাহাড়ের উঁচু ঢালুতে বাতাসের আনাগোনায় এখানকার মানুষের বসবাস। প্রকৃতির সাথে প্রকৃতির সাঝে সবকিছু প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি আসবাবপত্র সহ মাচাং ঘরগুলো। আমাদের জীবনের সাথে সংস্কৃতি যেমন ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। বসবাস করার মাচাং ঘরগুলোও আমাদের আদি সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে গেছে তা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের যে আধিপত্য থেকে শুরু করে ভিন্নতা দেখা যায় তা আমাদের যুগে যুগে টিকিয়ে থাকলেই আমরা টিকিয়ে থাকবো। যুগে যুগে আদি সংস্কৃতিগুলোই আমাদের ঐতিহ্য বহন করে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাহাড়ি মাচাং ঘরগুলোই টিকিয়ে রেখেছে আমাদের জীবনযাপনকে।