"""নকশীকাঁথার জীবনকথা""" "মনের সুখ-দুঃখ-বেদনা যত লুকিয়ে রাখে নকশী কাঁথার ভাঁজ, সেই ভাঁজে সেলাই দিয়ে মনের কথা বলা কি এত সহজ কাজ!" লোকশিল্পের অনন্য উদাহরণ হলো নকশীকাঁথা।আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধারণ করে লোকসংস্কৃতিকে গভীর নৈপূণ্যের দ্বারা আগলে রেখেছে এই ঐতিহ্যবাহী নকশীকাঁথা।জীবনের হাসি-কান্না,সুখ-দুঃখের অজস্র স্মৃতি স্হান পায় নকশীকাঁথাতে।সহজ-সাবলীল ছন্দে ধীরস্হির গতিতে কাঁথার কারিগররা প্রতিটি কণাকে আপন মহিমায় নকশার জালে রঙিন করে তুলেন বাহারি সুতোতে। জীবনের কথাগুলোকে যে সুতোতেও তুলে ধরা যায় তা কাঁথার কারিগরদের বেশ রপ্ত করা কৌশল। নকশিকাঁথা হলো সাধারণ কাঁথার উপর নানান ধরনের নকশা করে বানানো বিশেষ ধরনের কাঁথা।এটি ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সংস্কৃতির একটি অংশ।বাংলাদেশের জামালপুর,ময়মনসিংহ,রাজশাহী, ফরিদপুর ও যশোর এই কাঁথার জন্য বিখ্যাত।২০০৮ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গকে ভৌগলিক স্বীকৃত দেওয়া হয়।কাঁথাকে গ্রাম্য ভাষায় খেতা বলা হয়। নিয়াজ জামান বলেন,"কঁথা শব্দ থেকে কাঁথা এসেছে।যার অর্থ ত্যানা বা কাপড়ের টুকরো। অনেকগুলো কাপড় প্রায় ৫-৭ কাপড় দরকার হয়।প্রায় একমাস বা তারো বেশি সময় লাগে একটি কাঁথা সেলাই শেষ করতে।কাঁথায় বিভিন্ন ধরনের মটিফ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।ফুল,পাখি,গাছসহ দৈনন্দিন জীবনের সবকিছুই ধরা দেয় নকশার মাধ্যমে।চলমান সেলাই,বাঁকা সেলাই ,সুজনী সেলাই দিয়ে জীবনকাহিনীকে প্রকাশ করা হয়।
সেলাইকৃত কাঁথার আবার শ্রেণীবিভক্তি আছে!আরশিলতা,আসনকাঁথা,অতিথি কাঁথা আরো যে আছে কতো নাম বাহারি কাঁথাগুলোর। এই নকশীকাঁথাকে নিয়ে বেশ সাহিত্যচর্চাও রয়েছে।জসীমউদ্দিনের "নক্সী কাঁথার মাঠ"অনেক বিখ্যাত নাট্যকাব্য।এছাড়া রামায়ণ লেখক চন্দ্রবতীও সীতার গুণের বর্ণণায় এই নকশীকাঁথার কথা বলেছেন- "সীতার গুণের কথায় কি কব আর কন্হায় আঁকিল চান সুরুজ পাহাড়" নকশীকাঁথা নিয়ে সরকারের সুদূরপ্রসারী চিন্তার এখনি সঠিক সময়।একটি নকশীকাঁথার মূল্য পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে।আমরা যদি সেটি রপ্তানি করতে পারি তাহলে সেটি দেড় লাখ টাকায় রূপান্তিত হতে পারে সহজেই ।ইংল্যান্ড,ডেনমার্কে এগুলো চাহিদা রয়েছে অনেক।তারই ধারাবাহিকতায় জামালপুরে " নকশী পল্লী"স্হাপন করা হয়েছে।বগুড়াতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এরকম কাজ চলছে। এই শিল্পকে বাঁচাতে হলে আমাদের এখনি যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে--- লোকশিল্প জাদুঘর,বাংলাএকাডেমিতে প্রদর্শণীর ব্যবস্হা করতে হবে। প্রণদনার ব্যবস্হা করতে হবে মধ্যস্বত্তভোগীদের নির্মূল করতে হবে।
প্রশিক্ষণের সুযোগ দিতে হবে। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কারিগর গড়ে তুলে দেশের জিডিপিতে অবদান রাখা সম্ভব। কাঁথার ভাঁজে লুকিয়ে থাকে গ্রামীণ জীবনের কথা।নকশার সেলাই গৃহবধূর মনের কথা বলে।কাঁথার মটিফ দেশের ঐতিহ্যকে লালন করে।তাই এটি আমাদের জাতীয় সম্পদ।সবার উচিত সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে এই পুরাতন ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করা।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া বাংলাপিডিয়া জাগো নিউজ নকশীকাঁথা(নিয়াজ জামান) বাংলার নকশিকাঁথা (শীলা বসাক)
লেখা: সাদিয়া ইসলাম
2020-21 সেশন
ফোকলোর বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়