নীলফামারী জেলা বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তঘেষা জেলা। এটি কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। জেলা তার শিল্প, কৃষি, নদী, ঐতিহ্য এবং নানা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সুপরিচিত। নীলফামারী একটি অত্যন্ত উর্বর অঞ্চল, যেখানে কৃষি উৎপাদন প্রচুর। বিশেষত ভুট্টা, মরিচ, আলু, ধান এবং তামাক এখানকার প্রধান ফসল। এছাড়া, জেলা তার ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর জন্যও পরিচিত।
নীলফামারী জেলার নামকরণ একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে হয়েছে। ধারণা করা হয়, এই অঞ্চলে ইংরেজ নীলকরেরা নীল চাষ শুরু করলে এখানে নীল খামার গড়ে ওঠে, এবং সেগুলোর নাম হয়ে যায় ‘নীল খামারী’। এই নামটির অপভ্রংশ হয়ে সময়ের সাথে সাথে নীলফামারী নামকরণ হয়ে হয়।
১৭শ ও ১৮শ শতাব্দীতে ইংরেজরা এখানে নীল চাষের জন্য অনেক খামার স্থাপন করেছিল, যার কারণে জেলা এই নামে পরিচিতি লাভ করে। এখানে নীল চাষের ব্যাপকতা ছিল এবং এটি ওই সময়কার অর্থনীতি এবং সংস্কৃতিতে বড় প্রভাব ফেলেছিল।
নীলফামারী জেলার আয়তন প্রায় ১৫৪৬.৫৯ বর্গ কিলোমিটার। এটি ২৫°৪৪´ থেকে ২৬°১৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪৪´ থেকে ৮৯°১২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ এর মধ্যে অবস্থিত।
এ জেলার সীমানা:
নীলফামারী জেলার প্রধান নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে তিস্তা, যমুনেশ্বরী, বুড়ি তিস্তা, এবং ঘাঘট। এই নদীগুলোর পানি জেলা কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ জেলা কৃষি নির্ভর, এবং এখানকার কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফসল হল ভুট্টা, মরিচ, আলু, ধান, গম, তামাক, সরিষা, এবং পাট। বিশেষ করে ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলায় প্রচুর ভুট্টা চাষ হয়, এবং মরিচের চাষও বিশেষভাবে পরিচিত। তিস্তা সেচ প্রকল্প কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
নীলফামারী জেলা শিল্পপ্রধান অঞ্চল হিসেবেও পরিচিত। জেলা রংপুর বিভাগের প্রধান শিল্প কেন্দ্র, এবং এখানে রয়েছে অনেক সরকারি ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। বিশেষত উত্তরা ইপিজেড (উত্তরা এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন) এখানকার প্রধান শিল্প অঞ্চল, যেখানে প্রচুর পরিমাণে পোশাক, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং অন্যান্য শিল্পসমূহ প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।
এছাড়া, নীলফামারী জেলায় বিদ্যুতের সরবরাহও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে, প্রায় প্রতিটি ঘরেই বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে।
নীলফামারী জেলায় বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান:
এগুলির মধ্যে তিন বিঘা করিডোর এবং দহগ্রাম-আংগরপোতা ছিটমহল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত এবং দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু।
নীলফামারী জেলা তার লোকসংস্কৃতি ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্যও পরিচিত। এখানে বিভিন্ন ধরনের লোকগীতি, বাউলসঙ্গীত, পল্লিগীতি এবং মন্ত্র প্রচলিত।
এ জেলার একটি বিশেষ খাবার হল ডোমারের সন্দেশ, যা এখানে বিখ্যাত। এই সন্দেশটি দুধের ছানা, চিনি এবং খেজুর গুড় মিশিয়ে বিশেষভাবে তৈরি হয়। ডোমারের সন্দেশ এখন দেশজুড়ে জনপ্রিয় এবং এমনকি আমেরিকা, সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়।
নীলফামারী জেলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি ও শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলের উর্বর ভূমি এবং নদীসমূহ কৃষির জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করেছে, এবং এখানকার প্রধান অর্থকরী ফসল যেমন ভুট্টা, মরিচ এবং আলু দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ হয়। এছাড়া, নীলফামারী তার ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর জন্যও বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, যা জেলা পর্যটনকে প্রসারিত করছে। ডোমারের সন্দেশ এর মাধ্যমে এখানকার খাবারও দেশ-বিদেশে পরিচিতি লাভ করেছে।