লালমনিরহাট জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা, যা রংপুর বিভাগের অন্তর্গত। এটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং কৃষিজ উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত। এ জেলার মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ঐতিহাসিক স্থান, যা প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। লালমনিরহাট তার অবস্থানগত গুরুত্বের জন্যও বিশেষ পরিচিত, কারণ এটি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি জেলা, যেখানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা সীমান্তবর্তী।
লালমনিরহাট জেলার নামকরণ একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সাথে যুক্ত। “লালমনিরহাট” শব্দটি দুটি অংশে বিভক্ত—“লাল” এবং “হাট”। এটি লালপাথরের (যা মাটির নিচে পাওয়া যায়) কারণে "লালমনি" নামকরণ করা হয়, এবং এই নামের সাথে "হাট" যুক্ত হয়ে "লালমনিরহাট" হয়ে উঠেছে। ঐতিহাসিকভাবে, এই অঞ্চলের নাম "লালমনি" হয়েছিল ১৭৮৩ সালে, যখন নুরুলদিন নামে এক মহিলা কৃষক নেতা ব্রিটিশ শাসক ও জমিদারদের বিরুদ্ধে সাধারণ কৃষকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছিলেন। কালের পরিক্রমায় এই অঞ্চলের নাম হয় "লালমনিরহাট"।
লালমনিরহাট জেলার আয়তন প্রায় ১২৪৭.৩৭ বর্গকিলোমিটার। এটি ২৫°৪৬´ থেকে ২৬°৩৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০১´ থেকে ৮৯°৩৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। জেলার সীমানা:
লালমনিরহাট জেলার প্রধান নদী হচ্ছে তিস্তা ও ধরলা নদী। এই দুটি নদী জেলার কৃষি এবং পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিস্তা নদী বিশেষ করে জেলার পানি সরবরাহ এবং কৃষিকাজের জন্য অপরিহার্য। এছাড়া, লালমনিরহাট জেলা ভুট্রা, লটকন এবং আদা চাষের জন্যও বিখ্যাত।
লালমনিরহাটকে "ছিটমহলবেষ্টিত জেলা" বলা হয়ে থাকে, কারণ এখানে মোট ৩৩টি ছিটমহল রয়েছে। এর মধ্যে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা বৃহত্তম ছিটমহল। এই ছিটমহলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে তিনবিঘা করিডোর এর মাধ্যমে। এই করিডোরটি মূল ভূখণ্ডের সাথে ছিটমহলগুলোর সংযোগ স্থাপন করেছে, যা জনগণের জন্য বড় একটি সুবিধা।
লালমনিরহাট জেলায় অনেক ঐতিহাসিক স্থান এবং দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো:
লালমনিরহাট জেলার লোকসংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানকার বিভিন্ন লোকসংগীত যেমন পল্লিগীতি, বাউলসংগীত, মন্ত্র, ধাঁধাঁ, ছড়া, গান ইত্যাদি এখানে প্রচলিত। জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে অন্যতম সিদল ভর্তা, যা বিভিন্ন ধরনের শুঁটকির সাথে মসলা মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এছাড়া, এখানকার হাড়িভাঙ্গা আম, তামাক ও আখ বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
লালমনিরহাট জেলা একটি কৃষিনির্ভর অঞ্চল। এখানকার প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কৃষি। ভুট্রা, লটকন, আদা, আখ, তামাক, এবং বিভিন্ন শস্যের চাষ এখানে ব্যাপকভাবে হয়। এছাড়াও, এখানকার বুড়িমারী স্থলবন্দর এবং তিনবিঘা করিডোর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
লালমনিরহাট জেলা একটি ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপূর্ণ অঞ্চল, যা তার কৃষি, লোকসংস্কৃতি, ঐতিহাসিক স্থান, এবং সীমান্ত সংযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জেলা তার উন্নত কৃষি, বিশেষত ভুট্রা, লটকন, এবং আদা চাষের জন্য পরিচিত, এবং এখানে রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান যা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। এছাড়া, জেলা তার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং খাবারের জন্যও বিশেষভাবে পরিচিত।