মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন ১৯০৪ সালের ৩১ শে জানুয়ারি পাবনা জেলার সুজানগর থানার মুরারিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুহম্মদ জায়দার আলী এবং মাতার নাম জিয়ারুন্নেসা। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন গ্রামের মাধব নন্দী পাঠশালায় এবং পরবর্তীতে খলিলপুর হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে আই.এ এবং রাজশাহী কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন। ১৯২৮ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী লাভ করেন।
১৯২৯ সালে স্কুল সাব ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করার পর তিনি বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ করেন এবং সেখানকার লোকসংগীত ও অন্যান্য ফোকলোর উপাদান সংগ্রহ করেন। তিনি শুধু সংগ্রাহক ছিলেন না, একজন দক্ষ সংগঠক ও প্রকাশকও ছিলেন। তার সংগ্রহের প্রতি আগ্রহ বিশেষভাবে তার ছাত্রজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেরণায় শুরু হয়। একাধিক প্রখ্যাত ব্যক্তির উৎসাহে তিনি ফোকলোর চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন।
মনসুর উদ্দীন দীর্ঘ ৫৬ বছর ধরে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের লোকসংগীত সংগ্রহ করেন এবং তা "হারামণি" গ্রন্থে প্রকাশ করেন। তার সংগ্রহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল লালন ফকিরের গান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও "হারামণি" প্রকাশের মাধ্যমে মনসুর উদ্দীনের কাজে আশীর্বাদ প্রদান করেন।
হারামণি ছিল তার প্রধান কাজ এবং এটি ১৯৩১ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত ১১টি খণ্ডে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে একাধিক লোকগান, বিশেষত বাউল গান, বিবাহগান, জারি, সারি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত ছিল। তার সংগ্রহের কাজ শুধু একটি বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লোকসংগীত শাস্ত্রিকভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতেন।
ফোকলোর চর্চায় তিনি একজন মেধাবী সংগঠকও ছিলেন। তার প্রচেষ্টায় ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় "বাংলাদেশ ফোকলোর পরিষদ", যা দেশের প্রথম বেসরকারি ফোকলোর গবেষণা প্রতিষ্ঠান ছিল। ১৯৫২ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক লোকসংগীত সম্মেলনে তিনি সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
মনসুর উদ্দীনের দীর্ঘ জীবনের কাজের মধ্যে তার শিক্ষা, সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের পাশাপাশি এই ফোকলোর গবেষণার প্রতিষ্ঠা ছিল তার অন্যতম বড় অর্জন। ১৯৮৭ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।