গুরুসদয় দত্ত: লোকসংস্কৃতির অগ্রদূত

User

শিক্ষার্থী , Rajshahi University

Honours 4th year


রেজী:
BCW24120005

প্রকাশিত:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

গুরুসদয় দত্ত

গুরুসদয় দত্ত ছিলেন জ্ঞান, শ্রম, সত্য, ঐক্য ও আনন্দের প্রতীক।


 

গুরুসদয় দত্ত জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮২ সালের ১০ মে, শ্রীহট্ট জেলার কুশিয়ারা নদীর তীরে অবস্থিত বীরশ্রী গ্রামে দত্ত চৌধুরী পরিবারে। তাঁর পিতার নাম রামকৃষ্ণ দত্ত এবং মাতার নাম আনন্দময়ী দেবী। সম্ভ্রান্ত জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করলেও ভোগ-বিলাসে ডুবে থাকেননি তিনি। ছোটবেলা থেকেই নাচ-গানের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। সন্ধ্যায় কীর্তনের আসরে নাচ-গানে অংশ নিতেন।

শিক্ষাজীবন

তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজ গ্রামের মাইনর স্কুলে। পরে সিলেটের ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৯৯ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। ১৯০১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফ.এ. পাশ করেন এবং প্রথম স্থান অর্জন করেন। এ পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্ব প্রদর্শনের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে "সিন্দ্ধ্যা" স্বর্ণপদক প্রদান করে।

আই.সি.এস. পড়ার জন্য ১৯০৩ সালে তিনি ইংল্যান্ডে যান এবং ১৯০৫ সালে সপ্তম স্থান অধিকার করে আই.সি.এস. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ক্যামব্রিজের ইমানুয়েল কলেজে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সময় Constitutional Law বিষয়ের পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন।

কর্মজীবন

গুরুসদয় দত্তের প্রথম কর্মক্ষেত্র ছিল গয়া জেলায়। ১৯০৬ সালে গয়ার এস.ডি.ও. পদে দায়িত্ব পালনকালে ব্রজেন্দ্রনাথ দে-এর চতুর্থ কন্যা সরোজনলিনী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। কর্মজীবনে বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বহু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারত সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯২৯ সালে রোমে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কৃষি সম্মেলনে এবং একই বছরে ইংল্যান্ডের রয়াল অ্যালবার্ট হলে All India Folk Dance Festival-এ তিনি অংশগ্রহণ করেন।

সাংগঠনিক কাজ

গ্রাম বাংলার উন্নতির জন্য তিনি ১৯৩১ সালে "পল্লী সম্পদ রক্ষা সমিতি" এবং "ব্রতচারী সমিতি" গঠন করেন। এই সমিতি লোকশিল্প সংগ্রহ ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ফোকলোর গবেষণা

গুরুসদয় দত্ত লোকশিল্প, লোকসংগীত ও লোকনৃত্য নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর গবেষণার একটি প্রধান আবিষ্কার হলো যুদ্ধনৃত্য রাঁইবিশে।

গ্রন্থসম্ভার

গুরুসদয় দত্তের রচিত গ্রন্থগুলো:

ভজার বাঁশী (১৯২২)

পল্লী সংস্কার (১৯২৫)

সরোজনলিনী (১৯২৬)

পল্লী সংগঠন (১৯২৭)

গোড়ায় গলদ (১৯২৮)

গানের সাজি (১৯৩২)

ব্রতচারী কথা (১৯৩৪)

পাগলামির পুঁথি (১৯৫৬)


বাংলার সংস্কৃতির জন্য অবদান

লোকসংস্কৃতি পুনরুজ্জীবনের জন্য তিনি "বঙ্গীয় পল্লী সম্পদ রক্ষা সমিতি" প্রতিষ্ঠা করেন। লোকনৃত্য, লোকগীতি ও লোকশিল্পের সংরক্ষণে তাঁর প্রচেষ্টা বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

মৃত্যু

বাংলার এই মহান সাধক ১৯৪১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র:

বাংলার ফোকলোর সাধক - উদয় শংকর বিশ্বাস, ২০১৪

বাংলাদেশের ফোকলোর সাধক - মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, ২০০৭