সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সাম্য ও সমতার প্রয়োজনীয়তা

User

শিক্ষার্থী , ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

None


রেজী:
BCW25040002

প্রকাশিত:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৫


সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সাম্য ও সমতার প্রয়োজনীয়তা

সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সাম্য ও সমতার ভূমিকা অপরিসীম। সাধারণভাবে 'সমতা' বলতে সমাজে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে অনগ্রসর শ্রেণিকে প্রয়োজনীয় সুযোগ দিয়ে অগ্রসর ও সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে উন্নত শ্রেণির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে আসার প্রচেষ্টাকে বোঝায়।

তবে সাম্য ও সমতা নতুন কোনো বিষয় নয়। এর উৎপত্তি মূলত আদিম সমাজ গঠনের অন্তর্নিহিত কাঠামোর মধ্যেই নিহিত। নবপালীয় যুগে কৃষিকাজ ও বিভিন্ন প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ সামাজিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করে। সেই ঐক্যের বন্ধনে গুরুত্ব পায় সামাজিক সমতা, পারস্পরিক সম্মান ও ন্যায়বিচার।

কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে সামাজিক কাঠামো বদলে যেতে থাকে। সমাজে বাড়তে থাকে বৈষম্য, শুরু হয় অর্থনৈতিক শোষণ এবং দাস-ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার সূচনা। এ প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে পড়ে সাম্য, সমতা ও আইনের সঠিক প্রয়োগ।

তবে যুগে যুগে সমাজে সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আবির্ভূত হয়েছে নানা ধর্ম ও মতবাদ— হিন্দু, ইহুদি, খ্রিস্টান, ইসলামসহ অন্যান্য অনেক ধর্ম। এসব ধর্ম ও মতবাদ সমাজে সাম্য ও সমতা প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছে, বৈষম্য দূরীকরণে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সুবিধাবাদী অনুসারীরা বিভিন্ন সময়ে নিজের স্বার্থ রক্ষার্থে এসব ধর্মের শিক্ষা বিকৃত করেছে। ফলে সমাজে শুরু হয় নতুন অবহেলার অধ্যায়।

মানুষ-নির্মিত আইনের সূচনা হয় বেবিলনে। কালের পরিক্রমায় আইন বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে উন্নত হয়ে একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক বিশ্বে পৌঁছেছে। আবিষ্কৃত হয়েছে অসংখ্য পরিভাষা, কাঠামো ও প্রতিষ্ঠান। নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হয়েছে সাম্য, সমতা ও স্বাধীনতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ।

তবুও রাষ্ট্রের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত গ্রাম ও সমাজ এখনো অবহেলিত রয়ে গেছে। পর্যাপ্ত আইন থাকলেও প্রশাসনিক, সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, বিবেচনাশীল রাজনীতির অভাব, দুর্নীতি ও সদিচ্ছার ঘাটতির কারণে এসব আইনের প্রয়োগ আজও অনেকাংশে স্বপ্নের মতো। অনেক সময় কোনো আইন বিরোধীদের দমন ও শোষণের জন্য তৈরি হয়, যা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।

গণতান্ত্রিক কিংবা অন্যান্য ব্যবস্থাপনায় প্রতিনিয়ত জনগণের সমর্থন পেতে রাজনৈতিক চাতুর্য, গলাবাজি ও দমন-পীড়নের আশ্রয় নেওয়া হয়। এর ফলে সামাজিক সমতার সঠিক প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়, বৈষম্য দিন দিন প্রকট হয়, শ্রেণিবৈষম্য বাড়ে এবং অনগ্রসর শ্রেণি রাষ্ট্র ও সমাজে চূড়ান্ত অবহেলায় পতিত হয়।

তাই সমাজকে টিকিয়ে রাখতে ধর্মীয় বিভেদ, সম্প্রদায়গত গোড়ামী ও স্বার্থপরতা পরিহার করে যথাযথ আইন তৈরি ও তার বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে সামাজিক সাম্য, সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যথায় ধ্বংস হয়ে যাবে সামাজিক কাঠামো, হারিয়ে যাবে আদিকালের মানবিক বন্ধন ও স্বপ্ন, এবং এই বৈষম্যে গড়া পৃথিবী হয়ে উঠবে এক অসহ্য, অসাম্যপূর্ণ ক্ষণস্থায়ী বাস্তবতা।

লেখক পরিচিতি:
আশিকুর রহমান
শিক্ষার্থী, আল-ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া